কক্সবাজার, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

উখিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩

বিশেষ প্রতিনিধি, উখিয়া::

কক্সবাজারের উখিয়ায় এক সংখ্যালঘুর বসতভিটেতে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে ভাঙচুরসহ তাণ্ডবতা চালিয়ে ভিটে দখলের চেষ্টা চালায়। এতে বাধা দেওয়ার সময় বৃদ্ধ গৃহকর্তা, নারী শিশুসহ ৩ জন আহত হয়। এতে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে উখিয়া সদর নুর হোটেল সংলগ্ন এলাকায় উখিয়া হরিণমারা প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে উখিয়া থানায় অভিযোগ করেন পরিমল বড়ুয়া৷

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ঘটনা দিন ভোর সকালে সদরের বড়ুয়া পাড়া গ্রামের অধিবাসীরা ঘুমন্ত ছিল। এ-সময় ৫০/৬০ জনের সশস্ত্র একদল দুর্বৃত্ত মৃত রবীন্দ্রলাল বড়ুয়ার ছেলে দিনমজুর পরিমল বড়ুয়ার বসত ভিটিতে
হানা দিয়ে ব্যাপক তাণ্ডবতা চালিয়ে টিনের ঘেঁড়াবেড়া, কাঁচা ঘর ভাঙচুসহ ক্ষেত কামার নষ্ট করে। ভাঙচুরের টিনের শব্দে পরিমল বড়ুয়ার পরিবারের ও পাড়ার লোকজনের ঘুম ভাঙ্গে। এরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাধা দেওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের মারধরে পরিমল বড়ুয়া (৭৫) তার স্ত্রী শাপুলু বড়ুয়া (৬২)নাতনী সপ্তম শ্রেণীর শিশু প্রজ্ঞা বড়ুয়া (১৩) আহত হয়। এছাড়া পুত্রবধূ মিল্কি বড়ুয়া (৩২) কে শ্লীনতাহানির চেষ্টা চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে এদের জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকিয়ে তালাবদ্ধ করে ভিটে দখলের চেষ্টা চালায়। আহত পরিমল বড়ুয়া অভিযোগ করেন হরিণমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে সশস্ত্র ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা আমার বসত ভিটে দখলের জন্য আমরা ঘুমন্ত অবস্থায় এই বর্বর তাণ্ডবতা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী পাড়ালিয়া বিধু বালা বড়ুয়া জানান, সন্ত্রাসীরা হায়নার মতো যেভাবে গ্রামে আক্রমণ করে এসময় পাড়ার লোকজন এগিয়ে গেলে তাদেরকেও অস্ত্র উঁচিয়ে ধাওয়া করে। এতে সংখ্যালঘু বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার ব্যাপারে প্রভাষ বড়ুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অভিযোগ দেন।তিনি জানান মাষ্টার আব্দুল মালেকের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে জমি সংক্রান্ত অপর আপীল ৩৫/২৪ মামলা বিচারাধীন রয়েছে তাই পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগে এ ঘটনা ঘটায়।

ঘটনার পরে দুপুরে উখিয়া কেন্দ্রীয় আনন্দভবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবোধি মহাথের, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উখিয়ার সভাপতি শিক্ষক মেধু কুমার বড়ুয়াসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তীব্র নিন্দা ও এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এদিকে শিক্ষক আব্দুল মালেক এ প্রসঙ্গে জানান আমার রেজিস্ট্রি মূলে ক্রয়কৃত খতিয়ানী জমির দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে নতুন ভূমি আইনে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬৭৮ নং মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

উখিয়া হরিণমারা প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমার যায়গা আমি ভোগ করবো৷ বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক আমার যায়গা দখল করে আসছিলো পরিমল বড়ুয়ার পরিবার৷ আমি তাদের বাড়িতে হামলা বা তাণ্ডব চালাইনি।”

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুলিশ চলে আসে। পরে থানায় পরিমল বড়ুয়া অভিযোগ দায়ের করেছে৷ এ ঘটনার ব্যাপারে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী আইনী বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাঠকের মতামত: